এবারের ঈদে ঘুরে আসতে পারেন রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ী

রাজশাহীর পুঠিয়া থেকে আমানুল্লাহ সরকারঃ
রাজশাহী ও ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ পার্শ্বে রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার পূর্ব দিকে সুপারী আর নারিকেল গাছে ঘেরা সুবিশাল এলাকায় মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে মন্দিরের এক শহর যার নাম পুঠিয়া। 
পুঠিয়া রাজবাড়ীর বিশাল চত্বরকে ঘিরে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাচীন স্থাপনা যা সহজেই আপনার নজর কাড়তে সক্ষম হবে। 

প্রাচীন  এই স্থাপনা গুলির মধ্যে রয়েছে মন্দির. রাজবাড়ী, রাজবাড়ীকে চার দিক থেকে ঘিরে রাখা পুকুর-দিঘি সহ নানান স্থাপনা। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক থেকে রিক্সা অথবা ভ্যান ধরে কিছুটা পথ সামনে গেলেই বিশাল একটা চুঁড়া জানান দিবে মন্দিরের অবস্থান। রাজবাড়ীর প্রবেশ পথে পুকুরের পাড়ে নিশ্চুপ দাড়িয়ে থাকা এ মন্দিরটির নাম শিব মন্দির। মহারাণী ভুবন মোহনী দেবী ১৮২৩ সালে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরিসংখ্যান মতে এটিই এশিয়ার সবচেয়ে বড় শিব মন্দির। সিঁড়ি বেয়ে মন্দিরের দোতলায় উঠলেই দেখা যাবে এর চার পাশের বারান্দা এবং  একটি  মাত্র কক্ষ যা দুই স্তর বিশিষ্ঠ বারান্দাকে ঘিরে রেখেছে। মন্দিরের মূল কক্ষের অভ্যন্তরে রয়েছে কষ্ঠি পাথরের বিশাল এক শিব লিঙ্গ। সমগ্র মন্দিরের দেয়ালে পৌরাণিক কাহিনী চিত্র খচিত আছে। শিব মন্দিরের কোল ঘেঁষে লাগানো পূর্ব পাশে গোল গুম্বুজ আকৃতির আরেকটি ছোট মন্দির আছে। শিব মন্দির পেরিয়ে  দক্ষিণ দিকে গেলেই চোখে পড়বে চার তলা বিশিষ্ঠ আরেকট্ িমন্দির যার নাম দোল মন্দির। চার পাশে প্রায় ১০০০ টি দরজা সম্বলিত এই মন্দিরটি স্থানীয় লোকজনের কাছে হাজার দুয়ারী ঘর নামে পরিচিত। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে রাণী হেমন্ত কুমারী দেবী এ মন্দিরটি নির্মাণ করেন। দোল মন্দিরের সামনে ঘাসে ঢাকা বিশাল মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে দাড়িয়ে আছে পুঠিয়ার ঐতিহাসিক রাজবাড়ী। রাণী হেমন্ত কুমারী দেবী তাঁর শাশুড়ি মহারাণী শরৎসুন্দরী দেবীর সম্মানার্থে ১৮৯৫ সালে নির্মাণ করেন বিশাল আকৃতির বিখ্যাত এই রাজবাড়ী। পুঠিয়ার এই রাজবাড়ীটি বর্তমানে লস্করপুর মহাবিদ্যা নিকেতনের একাডেমিক ভবন হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাজবাড়ীর পূর্ব পাশে রাজরাণীর গোসল করার জন্য পুকুরের কোল ঘেঁসে তৈরী করা হয়েছিল সান বাঁধানো রাণী ঘাট যার অস্তিত্ব এখনো বিদ্যমান। পুঠিয়া রাজবাড়ীর ভেতরে পোড়ামাটির অলঙ্করণে সমৃদ্ধ একটি মন্দির আছে যার নাম গোবিন্দ মন্দির। বর্গাকারে নির্মিত এই মন্দিরটির চার পাশে চারটি বর্গাকার কক্ষ আছে। মন্দিরটি আড়াইশ বছরের পুরোনো বলে প্রচলিত থাকলেও এর চাকচিক্য দেখে ধারণা করা হয় এটি উনবিংশ শতাব্দীতেই তৈরী করা হয়েছিল। গোবিন্দ মন্দিরের দক্ষিণ পাশে ছোট আরো একটি মন্দির রয়েছে। রাজবাড়ীর পশ্চিম পাশে দিঘি  এবং তার পশ্চিম তীরেই রয়েছে কারুকার্য খঁচিত  আকর্ষণীয় বড় আহ্নিক মন্দির। আহ্নিক মন্দিরের পাশে দক্ষিণমুখী অবস্থায় আরো একটি মন্দির দাঁড়িয়ে আছে যার নাম গোপাল মন্দির। সুপারী ও নারকেল গাছঘেরা ঐতিহাসিক স্থাপত্য শৈলীর প্রাচীন এই নিদর্শন গুলো দেখার জন্য প্রতিদিন দেশ বিদেশের শত শত পর্যটক ভিড় জমান রাজশাহীর পুঠিয়ায়। পুঠিয়া সহ সমগ্র রাজশাহী বাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি রাজশাহীর ঐতিহাসিক আকর্ষণীয় এই এলাকটিকে পর্যটন নগরী হিসাবে সারা বিশ্ববাসীর নিকট তুলে ধরার। রাজশাহী বাসীর আশা সরকার এবং প্রতœতত্ব অধিদপ্তরের নজরদারী এবং সহায়তা পেলে রাজশাহীর পুঠিয়াও হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটন নগরী।

Comments

Popular posts from this blog

বাংলাদেশে এফটিএফএল প্রশিক্ষণের সূচনা ও সম্ভাবনা

দৈনিক মুক্তচেতনা

সোনালী ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ, ফলাফলে দুর্নীতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে